রাজশাহীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রাজশাহী অঞ্চল, রাজশাহীর পরিচালক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আলী রেজা আজাদ এর দূর্ণীতি অনিয়ম ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দূর্ব্যবহারের অভিযোগে তাদের অপসারণ দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি (বাকশিস) রাজশাহী জেলা ও মহানগর।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজের সম্মেলন কক্ষে বাকশিস রাজশাহী জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাজ কুমার সরকার’র পরিচালনায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, করােনা মহামারিতে বিগত প্রায় দুই বছর যাবত শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হওয়ায় আবারও শিক্ষায় যে অপূরনীয় ক্ষতি সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষক সমাজ আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। জনবল কাঠামাে ও এম.পি.ও নীতিমালা’২১ এর অনেক ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য থাকলেও বিশেষতঃ বেসরকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবী অনুপাত বাতিল করে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উচ্চতর স্কেলের জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপাত প্রথা বাতিল করে এম.পি.ও ভুক্তির তারিখ হতে ষােল বছর পূর্ণ হলে শিক্ষক-কর্মচারীগণ উচ্চতর বেতন স্কেল পাবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন। এই জন্য শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখ পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি যে, রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ডঃ কামাল হােসেন ও সহকারী পরিচালক ডঃ আলী রেজা আজাদ শিক্ষক-কর্মচারীদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। গতবারে ৮টি জেলা থেকে প্রায় ৪৫০০ জন শিক্ষক-কর্মচারী এম.পি.ও এবং উচ্চতর বেতন স্কেল এর জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে থেকে শুধুমাত্র ১৭০ জনের আবেদন পত্র গৃহীত হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের আবেদনে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, বাতিলের কিছু খতিয়ান আপনাদের সম্মুখে
উপস্থাপন করছি। আদর্শ কলেজ, কাটাখালী রাজশাহীতে সিনিয়রের ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে মাে: সিরাজুল হক কে না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে জুনিয়র ০৩ (তিন) জন কে সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে সিরাজুল হক লিখিত ভাবে পরিচালক বরাবর অভিযােগ করলেও তদন্ত ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে জুনিয়র ৩ (তিন) জনকে শিক্ষক কে সহকারী অধ্যাপকে পদোন্নতি দিয়েছেন, যাহা সরকারের জনবল কাঠামাের সুস্পষ্ট পরিপন্থি। * ইতোপূর্বে কেশবপুর স্কুল এন্ড কলেজ, বাঘায় একজন জুনিয়র শিক্ষক কে অর্থের বিনিময়ে সহকারী অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি দিলেও, সিনিয়র শিক্ষকের অভিযােগের ভিত্তিতে ডঃ কামাল হােসেন কে শােকজ করেছিলেন। সেই সাথে জুনিয়র শিক্ষককে সমস্ত টাকা ফেরৎ দিতে হয়েছে। * তালন্দ কলেজ, তানাের ২ জন শিক্ষকের নাম একই হওয়ায় ২য় জন কে সহকারী অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি দেয় নাই। * আদমদীঘি , পাইলট মহিলা কলেজের একজন শিক্ষকের ফলাফল সিট সঠিক নয় বলে পরপর ৩ বার বাতিল করে। পরবর্তীতে অর্থের বিনিময়ে ঐ ফলাফল সিটের মাধ্যমেই এম.পি.ও ভূক্ত হয়। * ধােপাঘাটা ডিগ্রী কলেজের একজন শিক্ষকের নামের বানানে হাইপেন না থাকায় তার সহকারী অধ্যাপকের পদোন্নতির আবেদন বাতিল করেছেন। * স্মারক নং না থাকায় অনেক আবেদনপত্র বাতিল করেছেন। *নামের সাথে MD এর পরে Full Stop না থাকায় আবেদনপত্র বাতিল করেছেন। * বঙ্গবন্ধু কলেজ, হাটরামচন্দ্রপুর কলেজ ও মহব্বতপুর খানপুর ডিগ্রী কলেজ, কমেলা হক ডিগ্রী কলেজ এর তুচ্ছ কারণে সকল আবেদন পত্র বাতিল করেছেন।
* সরনজাই ডিগ্রি কলেজ, তানাের এর সহকারী অধ্যাপকের আবেদন করলে, সিনিয়র কে বাদ দিয়ে জুনিয়র কে সহকারী অধ্যাপকের স্কেল প্রদান করা হয়। * শিক্ষকরা প্রয়ােজনে তার সাথে অফিসে দেখা করতে গেলে তাঁর পিয়ন বাধা দেয়। কেহ প্রবেশের অনুমতি পেলে তাকে অন্য ভাষায় গালিগালাজ ও দূর্ব্যবহার করে।
* নতুন এম.পি.ও ভূক্তির ক্ষেত্রে অর্থের প্রত্যাশায় খুঁজে খুঁজে কারণ বের করে আবেদন পত্র বাতিল করে। আবেদনপত্র বাতিলের ক্ষেত্রে সকল কারন একবারে চিহ্নিত না করে কৌশল হিসাবে একটির
পর একটট কারণ বাহির করে, যাতে অর্থ আদায় করা যায় । এহেন ঘুষখাের দুর্নীতিবাজ, স্বেচ্ছাচারী এবং সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ঠকারী আঞ্চলিক
পরিচালক রাজশাহীর ড. কামাল হােসেন ও সহকারী পরিচালক ড, আলী রেজা আজাদ কে অনতিবিলম্বে অপসারন করার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহােদয়কে বিশেষ ভাবে অনুরােধ করছি। অন্যথায় শিক্ষক সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচী ঘােষনা করে তাদের অপসারন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী অব্যাহত রাখবে।
লিখিত বক্তব্যে তারা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষক সমাজের বিশেষ করে বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার আদায়, মর্যাদা বৃদ্ধি, সর্বপরি বৈষম্যহীন একটি শিক্ষা ব্যবস্থার লড়াই সংগ্রামে আমাদের পাশে থেকে আপনারা সব সময় দৃঢ় ভূমিকা রেখে আমাদের দাবী দাওয়া আদায়ে সহযােগিতা করে, শিক্ষক সমাজকে সংগঠনমুখী করেছেন। এজন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। এই দুই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের নামে মামলা হলে তারা গত ৩১ অক্টোবর নগরীর শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে রাজশাহী বরেন্দ্র প্রেস ক্লাব সহ চারটি সাংবাদিক সংগঠনের ব্যানারে তাদের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করে। কিন্তু এই দুই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসী ভাড়া করে সেই মানব বন্ধনে হামলা চালায়। আমরা সেই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, সেই সাথে জড়িত সকল দোষীদের শাস্তিরও দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাকশিস রাজশাহী মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ নূরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ রনজিৎ সাহা,
বাকশিস জেলা সহ সভাপতি অধ্যক্ষ আঃ আজিজ, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মধু, অধ্যক্ষ রুহুল আমিন, সদস্য আশরাফুল ইসলাম, কারগরি শিক্ষক সমিতি রাজশাহী মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যক্ষ সাইফুর রহমান জেন্টু সহ জেলা, মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলা কমিটির শতাধিক শিক্ষক।