প্রেম কাহিনীকে আড়াল করতে চুরি ও ডাকাতি মামলা দিয়ে নিরপরাধ ৪ ব্যাক্তি জেলে! পুলিশকে ম্যানেজ করে জেলে না গিয়ে প্রেমিকাকে নিয়ে প্রেমিক বাসর
ঘরে! ১০বছর ৬মাস পর মামলাটি খালাস পেল প্রেমিক সহ নবীগঞ্জের অসহায় ৫ ব্যাক্তি
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রেমকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে কত প্রেমিক জুগল নানান ইতিহাস তৈরী কওে গেছেন। এরই দ্বারাবাহিকতায় নবীগঞ্জে জনৈক স্কুল ছাত্রীর সাথে রেফ্রিজারেশ ওয়ার্কসপ ব্যবসায়ী দুলনের সাথে প্রেমের সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা রাতে গোপনে গোপনে দেখা স্বাক্ষাত করতে শুরু করে। এ বিষয়টি এলাকার কিছু কিছু মানুষের নজরেও আসে। এর মধ্যে হঠ্যাৎ গভীর রাত ৩টার দিকে প্রেমিকার ঘর থেকে বের হওয়ার সময় প্রেমিকার পরিবারের
লোকজনের নজরে আসলে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিলে প্রেমিক মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। পর দিন সকালে নবীগঞ্জের আউশকান্দি রেফ্রিজারেশ ওয়ার্কসপে গিয়ে প্রেমিকার পরিবারের প্রভাবশালী লোকজন ব্যবসায়ী দুলনকে ধরে এনে উত্তম মধ্যম দিয়ে থানা পুলিশে সোর্পদ করে। এতে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রেমিক দুলন চুটে আসে। কিন্ত এ মামলায় প্রেমিক জেল না খাটলেও অন্য ৪জন
নিরপরাধ ব্যাক্তি কারাভোগ করতে হয়েছে। তবে, সত্যের জয় একদিন হয় এটাই সত্য। তাই ১০ বছর ৬মাস পর বিজ্ঞ আদালত সবাইকে বেখচুর খালাস দিয়ে দেন। রাখে আল্লাহ মারে কে? এ ঘটনাটি ঘটেছে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকন্দি ইউনিয়নের
আমোকুনা গ্রামে।
মামলায় খালাস প্রাপ্ত অসহায় দিন মজুর সিএনজি চালক সামছু মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আমাদেরকে মিথ্যা মামলা ও হামলার করে আসছে উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের আমোকুনা গ্রামের আহমদ চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, গৌছ সহ তাদের লোকজন। আহমদ চৌধুরী’র মেয়ে শাম্মি চৌধুরী বিগত ২০১২ সালে আউশকান্দি রশিদিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের
স্কুল ছাত্রী ছিল। সে আউশকান্দি হীরাগঞ্জ বাজারের রেফ্রিজারেশ ওয়ার্কসপ ব্যবসায়ী দুলনের সাথে প্রেমের সখ্যতা গড়ে তুলে। এতে তারা একে একে অপরকে
কাছে পেতে বিভিন্ন সময় স্কুল ফাকিঁ দিয়ে প্রেমলিলায় মগ্ন হয়ে দুলনের দোকান সহ অন্যান্য যাওয়া আসা করতো বলে এলাকাবাসীও বলেন। এতে প্রেমিকা
শাম্মি তার প্রেমিককে আরো কাছে পেতে প্রায়ই দিন রাতেই প্রেমিক দুলন তাদের বাড়িতে যাওয়া আসা করতো। গত ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ২০ তারিখ রাত সাড়ে ৩ টার দিকে প্রেমিকা শাম্মির ঘর থেকে প্রেমিক দুলন বেরিয়ে আসার সময় প্রেমিকার পরিবারের নজরে আসলে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিলে প্রেমিক দুলন তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে আসে। পরদিন ভোর বেলা আহমদ চৌধুরী,
কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, গৌছ সহ আমোকুনা গ্রামের লোকজন দুলনের দোকানের চতুর দিক ঘেরাও করে রাখেন। সে ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই তাকে ধরে আমকোনা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে তাকে বেধরক মারপিট করা হয়। এবং দুলনকে মারপিট করে আর কয় মশাহিদ ও সামছুল তর সাথে ডাকাতি করার সময় ছিল। সে সবার হাতেপায়ে ধরেও রক্ষা পায়নি! অবশেষে প্রেমিকার বাবার লাতি পর্যন্ত খেতে হয়েছে তাকে। কে শুনে কার কথা? বার বার বলছে আর কেউ ছিলনা। এ কথা বললেই আরো মারে দুলনকে। অবশেষে নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে
দুলনকে থানায় নিয়ে যায়। ডাকাত সর্দার বলে দুলনকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও সু-চতুর প্রেমিক দুলন পুলিশকে ম্যানেজ করে থানা থেকে চলে আসে। পর দিন নবীগঞ্জ থানার এসআই মিজান আউশকান্দি মাদ্রাসা পয়েন্ট এলাকা থেকে আমাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমাকে ও আমার বড় ভাইকে আসামী করে আমাকে বাউশার একটি মামলা দেখিয়ে কোর্টে চালান করে পুলিশ। এরপর ঐ প্রভাবশালীরা
বাদী হয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করে থানায়। এতে আরো ৩ স্থানের ৩জনকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। এ মামলায় আমি ১৭ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়ে মামলা চালাতে থাকি। আমার বিশ্বাস ছিল এ মামলায় আমাদের জয় হবে। কারণ আমি এসব কিছুই জানিনা বা করিনি। এই বিশ্বাস নিয়ে নানান আলোচনা সমালোচনার মধ্যে ১০টি বছর পার করেছি। আমার মায়ের চোখের জ্বলে বুক ভাসতো প্রতিনিহত। এসব দেখার মতোও কেউ ছিল না, ছিলেন শুধু আল্লাহ। হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট বিচারক-১ আদালত গত ২৮/০৪/২০২২ ইংরেজী তারিখে ১০ বছল ৬ মাস পর ঐ মিথ্যা মামলাটি বিজ্ঞ আদালত খারিজ করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, এ ঘটনার পরদিন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় দুলন সহ ৪জনের ছবি গণ মাধ্যমে প্রকাশ হয় যে, দুলনের মাধ্যমে আউশকান্দিতে চুরি- ডাকাতি বৃদ্ধি
পেয়েছে- চোরের গডফাদার দুলন! এমন কি ঐ ঘটনায় মামলা দায়ের করলে প্রেমিকা শাম্মিও দুলনকে চোর বলে লিখিত স্বাক্ষি দেয় যে তারা ডাকাতি করেছে। এর
পরদিন শাম্মিকে তড়িগড়ি করে তার ফুফুর বাড়ি বানিয়াচং উপজেলায় পাটিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে কি প্রেম থেকে থাকবে? এই প্রেমের কারণে কেউ জেলে, কেউ থানায়, কেউ বা ফুফুর বাড়ি। এতে প্রেমিক ও প্রেমিকার প্রেমের আগুন দাউ দাউ জ্বলতে থাকে। এতো কিছুর পরও প্রেমিক জুটি তাদের জায়গায় অটল থাকে। এ ঘটনার ৭দিনের মধ্যেই ডাকাত প্রেমিক দুলন প্রেমিকার ফুফুর বাড়ি বানিয়াচং গিয়ে সেখান থেকে তার প্রিয়তমা শাম্মিকে সাথে করে নিয়ে আসে তার বাড়ি ওসমানী নগর থানার আলীপুর গ্রামে। এরপর সরিয়ত মোতাবেক তাদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের
দাম্পত্ত জীবনে ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে। এবং দুলনও আউশকান্দি বাজারে ব্যবসা করে আসছে।
এ ব্যাপারে মামলা ও গণমাধ্যমে প্রকাশ আউশকান্দি বাজারের চোরের গডফাদার দুলনের সাথে এ নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, যা চলে গেছে তা নিয়ে আর কথা বলে
লাভ কি? এটা আমার ভাগ্যে ছিল। এ কথা বলে সে আর কিছু বলতে চায়না।
এ ব্যাপারে সামছুল আরো জানায়, তাদের সাথে আমাদের জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা চলছিল। আমাদেরকে আদালত মামলার রায় দিলেও তাদের ভয়ে আমরা আমাদের জায়গায় যেতে পারছিনা। আর যেতে চাইলেও তারা পুলিশ দিয়ে ভয় দেখায়। বিনা কারণে আমি ১৭দিন জেল কাটতে হয়েছে। তাই এই ভয়ে এখন আমাদের জায়গায় যেতে ভয় করে। কখন যে কোন মামলায় নাম দিয়ে জেলে পাঠায়। মামলা খালাছের খবর পেয়ে বাদী পক্ষ আমাদেরকে সুযোগ পেলে প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে।এ প্রশ্নের জবাবে সামছুল
এ প্রশ্নের জবাবে সামছুল বলে, দেশে যদি আইন বলে কিছু থাকে তাহলে আমিও আহমদ চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন ও গৌছ গংদের বিরোদ্ধে আতালতে দাড়াবো ইনশাল্লাহ। সবার জানা থাকা দরকার তাই আমার এ কথা গুলো আপনাদের সামনে তুলে
ধরলাম। সত্য কোনটা আর মিথ্যা কোনটা। তারা সমাজের প্রতিষ্টিত ব্যাক্তিবর্গ। কিন্তু তাদের ভিতরটা কত খারাপ তা বিবেচনা করার জন্যই। জানিনা আমার মতো কত মানুষ এ রকম মিথ্যা মামলায় আদালত পাড়ায় দৌড়াতে হচ্ছে। এ সব কথা বলতে বলতে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।