আলফাডাঙ্গায় সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

মারুফ সরকার,ঢাকা:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২
  • ৫৩ বার পঠিত

মারুফ সরকার,ঢাকা:

বাস টিকিট কাটা নিয়ে কাউন্টারে তর্কাতর্কির জেরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা করেছে একদল দুর্বৃত্ত। আলফাডাঙ্গার পৌর মেয়রের ভাই ও তার অনুসারীরা এই হামলা চালায়।

সোমবার দুপুরে আলফাডাঙ্গার স্থানীয় পরিবহন বাসস্টান্ডে হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক মুজাহিদকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এসময় তাকে দেখতে যান স্থানীয় ওসি, ইউএনও এবং সার্কেল এএসপি।

পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয় মুজাহিদকে।

মুজাহিদ ঢাকা টাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগাঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার ওপর হামলা চালিয়েছে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান সাইফারের ভাই জাপান মোল্লা ও তার পাঁচজন-ছয়জন সহযোগী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনার সময় সাংবাদিক মুজাহিদকে লোহার রড, স্ট্যাম্প, দেশী অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে পেটানো হয়। এসময় স্থানীয়রা তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদের ওপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। এতে বেশ কজন আহত হন।

স্থানীয় থানা পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় জড়িত একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।

জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কিনতে যান রমিজ নামের এক যুবক। তিনি ঢাকায় যেতে একটি টিকেটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মূহুর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মীমাংসা করে দিতে চাইলে সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হয় কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান মোল্লা ও তার সহযোগীরা। জাপান স্থানীয় পৌর মেয়র সাইফারের ছোট ভাই।

কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় পাশে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তাদের উপরও চড়াও হন জাপান ও সহযোগিরা।

সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর কেন এই হামলা প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা বলছেন, সম্প্রতি জাপান মোল্লা তার স্ত্রী সোহানা বেগমকে বেধড়ক মারপিট করে আহত করেন। পরে তাকে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ৭ জুন উপজেলার কুসুমদি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় সোহানার মৃত্যু হয়। পরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ গেলে তা তদন্ত করছে পুলিশ।

থানা সূত্রে জানা গেছে, জাপানের স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে নেগেটিভ কোনো তথ্য এলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।

 

আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মুজাহিদকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড, কাঠের বাট্যাম দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাত ও পায়ে বেশ জখম হয়েছে। পরে এক্সরে করা হয়।’

সাংবাদিক মুহাজিদকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এমন মারপিট করা হয়েছে জানিয়েছে স্থানীয় এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করা হয়েছে।’

এদিকে স্থানীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

মধুখালী সার্কেলের (মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা) সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর বলেন, ‘ঘটনা জানার পর পরই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে এটা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

আলফাডাঙ্গার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। ডিসি স্যার (জেলা প্রশাসক) বিষয়টি অবহিত আছেন। আপাতত তার (মুজাহিদ) চিকিৎসার ব্যবস্থা হোক। আমি সবসময় খোঁজ খবর রাখছি। আর গাড়িগুলো (যে পরিবহন নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত) আইন মেনে চলছে কি না বিষয়গুলো আমি নজর দিচ্ছি।’

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এবিষয়ে ঘটনায় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি। আমরা একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছি। ঘটনায় জড়িত বাকিদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতি পাওয়া) মো. জামাল পাশা বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর