ডেক্স রিপোর্ট :
শিবির কর্মী থেকে ছাত্রদলের শীর্ষ নেতা । অতঃপর অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে শিবির থেকে বহিষ্কৃত মোজাফফর হোসেন জয় আশুলিয়ায় হয়ে উঠেছে আতঙ্ক । তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর প্রভাব আর প্রতিপত্তির কারণে ধীরে ধীরে বিএনপির সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
বিএনপি ক্ষমতা হারালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর পরই ভোল্ট পাল্টে ক্ষমতাসীনদের সাথে ভিড়তে থাকে মোজাফফর । প্রথমে কষ্ট ও পরে ব্ল্যাকমেইলিং এর মাধ্যমে ব্যাবসায়ী,শিল্পপতি, আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের থেকে মাসিক হারে চাঁদা আদায় করে জীবন যাপন করা শুরু করেন ।
আওয়ামীলীগের সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের ভাগিনা ফয়সাল আহমেদ ও তার পার্টনারদের মালিকানাধীন জনপ্রিয় চ্যানেল সময় টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন । পরে আশুলিয়ার কারখানা মালিকদের সঙ্গে শ্রমিক এন্ট্রি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে অর্থ আদায় শুরু করেন এবং প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন এক টেলিভিশন সাংবাদিক (কর্মকর্তার) আস্থা অর্জন করেন । তাকে ম্যানেজ করে বনে যান সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক ।
গত ১২ বছরে প্রভাব বিস্তার করে ব্যাপক চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে কয়েক কোটি টাকার কালো সম্পদ লাভ করেছে। বর্তমানে তার বেতন ভুক্ত কয়েকজনকে সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন মোজাফফর হোসেন জয়।
এছাড়াও নীল নকশার মাধ্যমে সাভার উপজেলার জনপ্রিয় সাংবাদিক সংগঠন আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজের উপর প্রাণনাশ হওয়ার মিথ্যা নাটক সাজায় । যা পুলিশ ও ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের তদন্তে উঠে আসে এবং তাকে সতর্ক করা হয়। আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গঠনতন্ত্র না মেনে অবৈধভাবে গার্মেন্টস কর্মী, চোর , ছিনতাইকারী, জমির দালাল, ওষুধ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত সহকারীদের কাছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ক্লাবের সদস্য করেন। এতে ক্লাবের মূল ধারার সাংবাদিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন সাংবাদিকরা ।
মোজাফফর হোসেন জয়ের হাতে নির্যাতিত হয়েছে ১১ জন সাংবাদিক । তার সিন্ডিকেট এলাকায় সংবাদ তুলে ধরতে গেলে অন্য সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষিপ্ত আচরণ, মুঠোফোনে মা ভাই বোন তুলে গালমন্দ এবংকি ক্লাবে ডেকে এনে সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা মারধর করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
বর্তমানে আশুলিয়ায় সাংবাদিকতার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। নেপথ্যে মোজাফফর হোসেন জয়। সাংবাদিকতার ব্যানার ব্যবহার করে স্থানীয় থানায় প্রভাব বিস্তার, আশুলিয়ার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ,মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ঝুট ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ, জমির দালাল নিয়ন্ত্রণ, ডিইপিজেট সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, শিল্প সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জুয়ার আসরের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সহ বিভিন্ন কুখ্যাত সিন্ডিকেট পরিচালনা করে আসছেন।
সম্প্রতি সরকারের একটি তদন্ত সংস্থার রিপোর্টে তার এমন ভয়ংকর অজানা নেতিবাচক বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সম্প্রতি তার নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন পেশাদার সাংবাদিকরা। এ পর্যন্ত সাংবাদিক নেতাসহ আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের ১৮ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন এবং আরও ৭ জন খুব শীঘ্রই পদত্যাগ করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
অতিরিক্ত মাদক সেবনের কারণে পারিবারিক জীবনেও শান্তি হারিয়েছেন মোজাফফর হোসেন জয়। তবে সম্প্রতি তিনি ওমরা হজ্ব পালন করে ক্ষমা চাইলেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। ক্ষমা চাওয়ার পর সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আবার শুরু হয়েছে তার অনৈতিক বাণিজ্য ।
এদিকে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবে সদস্য নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অভিযোগে প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ সাংবাদিক একযোগে পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদের ৩ জন সদস্য রয়েছেন।
শুক্রবার সকালে ১৮ সদস্য স্বাক্ষরিত একটি পদত্যাগপত্র দপ্তর সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়।
আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক লাইজু আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, গত দুই বছর ধরে প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন; যাতে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সুনাম ব্যাপকভাবে নষ্ট হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে যোগ্যতাহীনদের প্রেস ক্লাবে সদস্যপদ দিয়েছেন বর্তমান সভাপতি মোজাফফর হোসাইন জয় ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম খান লিটন।
প্রেস ক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন (খোকা) চৌধুরী বলেন, বর্তমান কমিটির দুর্নীতি নিয়ে একাধিকবার আমরা আলোচনায় বসেছি। কিন্তু তারা সব সময়ই গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে চলছে। এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ক্লাবের ১৮ সদস্য একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
যারা পদত্যাগ করেছেন- মোহনা টিভির আশুলিয়া প্রতিনিধি ও আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক লাইজু আহাম্মেদ চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যায়যায়দিনের আশুলিয়া প্রতিনিধি শহীদুল্লাহ মুন্সী, প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার মাহফুজুর রহমান নিপু, দেশ রূপান্তরের আশুলিয়া প্রতিনিধি ও আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন (খোকা) চৌধুরী, এটিএন নিউজের সাভার প্রতিনিধি ও আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য জাহিদ হাসান সাকিল, আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও আলোকিত কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ওমর ফারুক।
পদত্যাগ করেন- দেশ টিভির সাভার প্রতিনিধি ও আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহিন, ডিবিসি টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি শফি মাহমুদ চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য ও আমাদের কণ্ঠ পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম রাজু, সময়ের আলো পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি ও প্রেস ক্লাবের সাবেক অর্থ সম্পাদক রাকিব হাসান জিল্লু, সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও দেশ বার্তা পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি আবুল হায়াত বাচ্চু, বণিক বার্তার সাভার প্রতিনিধি সোহেল রানা, সাবেক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ভোরের ডাক পত্রিকার আশুলিয়া প্রতিনিধি অপু খন্দকার।
পদত্যাগ করা অস্থায়ী সদস্যরা হলেন- আজকের পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি রিফাত মেহেদী, ঢাকা পোস্টের সাভার প্রতিনিধি মাহিদুল ইসলাম মাহিদ, যুগের কণ্ঠস্বর পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি আব্দুল কাইয়ুম, মাই টিভির সাভার প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল ওয়াহিদ, বাংলাদেশ খবরের আশুলিয়া প্রতিনিধি সীমা আক্তার (ছোঁয়া)।
Leave a Reply