নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারের নির্ধারিত ডিইপিজেড এলাকা হওয়ায় শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সাভারের আশুলিয়া। ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে ভাগ্য ফেরাতে ব্যবসা করতে আসেন মানুষেরা। তবে ব্যবসা করতে গিয়ে চাঁদাবাজি, হুমকির কারণে ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে ইয়ারপুর ইউনিয়ন,আশুলিয়া ইউনিয়ন, ধামসোনা ইউনিয়ন, বিরুলিয়া ইউনিয়নের এলাকাগুলো। অভিযোগ আছে এসবের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এদেরই একজন আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার।
তার রয়েছে নিজস্ব একাধিক বাহিনী । তার বাহিনীর দ্বারা গত দুই বছর আগে বৃহস্পতিবার ৩ জানুয়ারি দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে নিহান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী ব্যবসায়ী মাহফুজ আহাম্মেদের ঝুট ব্যবসা দখল চেষ্টা করেন যুবলীগের এই নেতা। পরে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ দেন ওই ব্যবসায়ী।
ওইদিন দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে অস্ত্রের মহড়ার মাধ্যমে নিহান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী ব্যবসায়ী মাহফুজ আহাম্মেদের ঝুট ব্যবসা দখল চেষ্টা করেন যুবলীগের এই নেতা। পরে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় অভিযোগ দেন ওই ব্যবসায়ী।
জানা যায় এই এলাকায় এমন ঘটনা নতুন নয়। নানা সময়ে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়েছে আশুলিয়া থানা যুবলীগের এই আহ্বায়ক।
সম্প্রতি আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত তিন বারের সফল চেয়ারম্যান সৈয়দ আহম্মেদ মাস্টার মারা যাওয়ায় তার পদ টি শূন্য ঘোষণা করে পুনরায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আর এতেই নৌকার মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বহুরূপী কবির হোসেন সরকার। কবির জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে পুরো আশুলিয়া থানা এলাকাকে তার সিন্ডিকেটের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
জানা যায়, সাভারে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় ২০১৩ সালে বাসে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত একাধিক নাশকতা মামলার আসামি কবীর হোসেন সরকার। এছাড়াও হত্যাচেষ্টা, জমি ও ঝুট ব্যবসা দখল এবং চাঁদাবাজিসহ প্রায় ডজন খানেক মামলারও আসামি কবীর। তবুও প্রায় চার বছর ধরে আসীন রয়েছেন আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে। ঘটিয়েছেন নানা বিতর্কিত কাণ্ড, পদদলিত করেছেন দলীয় ভাবমূর্তি। আগামিতেও না কি বিতর্কিত এই নেতা মামলার বোঝা মাথায় নিয়েই থানা যুবলীগের শীর্ষপদে নেতৃত্ব দেবেন বলে রটেছে গুঞ্জন। বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে তার প্রচারণামূলক ফেস্টুন ও যুবলীগ সেন্ট্রালেও চালাচ্ছেন জোড় লবিং।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে আশুলিয়া ও সীমান্তবর্তী জেলা গাজীপুরে রয়েছে নাশকতাসহ প্রায় ডজনখানেক মামলা। ২০১৩ সালে আশুলিয়ার নরসিংহপুরে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি নাশকতা মামলাটি (নং-৬২) দায়ের হয়। একই বছর তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা (নং-৫২) দায়ের করা হয় এই থানায়। এছাড়া ২০০৯ সালে মামলা (নং-৫১), ২০১০ সালে মামলা (নং-১১) ও ২০১৪ সালে মামলা (নং-৩৫) সহ বেশ কয়েকটি মামলা আশুলিয়া থানায় নথিভুক্ত রয়েছে।
আহ্বায়কের পদ পাওয়ার পর বিতর্কিত এই নেতার বিভিন্ন অপকর্মের স্বীকার ভুক্তভোগীরা গাজীপুরের কাশিমপুর ও আশুলিয়া থানায় পৃথক আরো চারটি মামলা দায়ের করেন।
এর মধ্যে ২০১৯ সালে হত্যাচেষ্টা ও চুরির অভিযোগে আবিদ সরকার লিমন যুবলীগের এই নেতাকে প্রধান আসামি করে কাশিমপুর থানায় মামলা (নং-১৫) দায়ের করেন।
২০১৮ সালে স্থানীয় এমপি ডা. এনামুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারণায় এক আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলার ঘটনায় কবির সরকারের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা (নং-৫০) দায়ের করা হয়।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আশুলিয়া থানায় দখল মামলা ও গাজীপুরে ২০১৭ সালে মামলা (নং-৫৪) আরো একটি মামলা রয়েছে।
আশুলিয়া থানা ও ইউনিয়ন যুবলীগের স্থানীয় নেতারা জানান, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকারের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার বড় ভাই শওকত হোসেন সরকার বর্তমানে গাজীপুর মহানগর বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়কের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
আশুলিয়া থানা যুবলীগের দুই কর্মী মাসুম মুন্সী ও আমিনুল ইসলাম খান বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কবির হোসেন সরকারের মত এমন একজন অনুপ্রবেশকারী কিভাবে আশুলিয়া থানা যুবলীগের কমিটিতে আহ্বায়কের পদে আসীন রয়েছেন তা বোধগম্য নয়। এমনকি আগামিতেও তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি পদ পেতে যাচ্ছেন বলেও তৃণমূলে গুঞ্জন রয়েছে। তাই আশুলিয়া থানা যুবলীগের কমিটিতে ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মীদের নিয়ে আসার দাবী জানান তারা।
যুবলীগ কর্মী মাসুম মুন্সি বলেন, কবির হোসেন সরকার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে প্রাননাশ ও ব্যবসা দখলের হুমকি প্রদান করে সন্ত্রাসীরা। এমন কাণ্ড ঘটতে থাকলে এখানে ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। এরকম কারণে এই এলাকা ক্রমেই ব্যবসায়ীদের জন্যে অনিরাপদ হয়ে উঠছে। আবার যদি হয় জনপ্রতিনিধি তাহলে নৌকার মান সম্মান সব ধুলোয় মেশাবে। ইউনিয়নবাসীকে পড়তে হবে জিম্মি দশায় ।
এসব ব্যাপারে আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার বলেন, তিনি পূর্নাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি পদের জন্য শতভাগ আশাবাদী। তবে তার বিরুদ্ধে বিএনপির নাশকতাসহ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দাবী করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। রাজনৈতিক কারনে তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছে। এসময় নিজের দলের সাবেক এমপি মুরাদ জংয়ের রোষানলে পড়েও মামলার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
এবিষয়ে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা বলেন, ‘সাভার ও আশুলিয়া যুবলীগে বিতর্কিত নেতা রয়েছে। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাই নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।’
তবে ঢাকা জেলা যুবলীগের সভাপতি জি এস মিজান বিতর্কিত আশুলিয়া থানা যুবলীগের