নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
২০২১ সালে হোমিওপ্যাথিক ও ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ে ডিগ্রিধারী কোনো ব্যক্তি নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না- এমন আদেশের ওপর পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়া হয় হাইকোর্ট থেকে । রায়ে এসব বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের পরামর্শ এসেছিল আদালত থেকে ।
এ সংক্রান্ত জারি করা রুল খারিজ করে গত বছর শনিবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৭১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছিলেন।
রায়ে বলা হয়েছিল, দুঃখজনকভাবে এটি লক্ষ্যণীয় যে, এখানে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসি এর নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট কর্তৃক এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের পূর্বে ডাক্তার (Dr.) পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।
কিন্তু রাজশাহীতে ডাক্তার সেজে একাধিক স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন মোঃ হৃদয় ইসলাম (৩৮)নামের এক প্রতারক। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সরে জমিনে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট মাছ বাজার সংলগ্ন ”নিউ লাইফ হারবাল মেডিকেলে”গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোন হাকিম বা চিকিৎসক নাই।
দুইজন কর্মচারী আছে তারাই রোগীর চিকিৎসা করছেন। তাঁদেরকে চিকিৎসার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, আমরা দুজনেই কর্মচারী, মোবাইল ফোনে কথা বলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
ডাক্তার কে? প্রশ্ন করলে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড দেন। সেই ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে “নিউ লাইফ হারবাল মেডিকেল” ডা: (হাকিম) মোঃ হৃদয় ইসলাম। ডি.ইউ.এম.এস (ঢাকা)।
এমন কোর্স করে ডাক্তার পদবী ব্যবহার মানে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করা।
এ বিষয়ে জানতে মোঃ হৃদয় ইসলামকে মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, নামের আগে ডাক্তার শব্দ ব্যবহার করলে মানুষ আমাকে ডাক্তার হিসেবে চিনবে, প্রচারের জন্যই ডাক্তার শব্দটা ব্যবহার করেছি। আপনি কোথায় থেকে ডাক্তারি পাস করেছেন এবং স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে ?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য না। তাছাড়া আপনি আমার কাগজপত্র দেখার কে? আমার অনেক সাংবাদিক পরিচিত আছে বলে ফোন কেটে দেয় প্রতারক হৃদয়। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ আছে গণমাধ্যমকর্মীরা তথ্য চাইলে যে কোন প্রতিষ্ঠান তথ্য দিতে বাধ্য। এক্ষেত্রে হৃদয় হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করছে।
এরপর শুরু হয় অনুসন্ধান। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক স্বাস্থ্যসেবামূলক ভুয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন প্রতারক হৃদয় ইসলাম। ডাক্তার না হয়েও ডাক্তার পরিচয় দিয়ে জনগণ ও সরকারের সাথে প্রতারণা করে আসছে প্রায় ১২ বছর। হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ন্যূনতম এম, বি, বি, এস পাস করতে হবে, তাহলে নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দেওয়া যাবে।
তিনি নগরীর ঘোষপাড়া মোড়ে “ইবনে সিনা লাইফ কেয়ার মেডিকো”নামে একটি স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। এছাড়াও বানেশ্বর বাজার পূবালী ব্যাংক সংলগ্ন “নিউ লাইফ হারবাল মেডিকেল” নামে আরেকটি স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে।
এই তিনটি স্বাস্থ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের বৈধতার বিষয়ে হৃদয় ইসলামকে আবারও মুঠো ফোনে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য না।
এ বিষয়ে জানতে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোঃ হাসান আল মারুফ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আইন অবমাননা কারিকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। এ ধরনের প্রতারককে আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আইনের ধারা অনুযায়ী সাজা নিশ্চিত করব, বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন রাজশাহী বিভাগ, ডা: আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক এর মুঠোফোন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিউ লাইফ হারবাল মেডিকেলের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়াও রাজশাহীতে এ ধরনের ভুয়া ডাক্তার ও ভুয়া ডাক্তারের চেম্বারের তালিকা করেন। তালিকা করে আমাকে দেন। আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
Leave a Reply