1. admin@onakanthirkantho.com : admin :
  2. editor1@raytahost.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  3. banhlarodikar69@gmail.com : Manun Mahi : Manun Mahi
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন

টুম্পা মনির এগিয়ে যাবার গল্প

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ২৩০ বার পঠিত

নাম “মৌসুমী আক্তার”, ৯০ এর দশকে টেলিভিশনে একটি লজেন্স এর বিজ্ঞাপন দিতো, “কাঁদছো কেনো টুম্পা মণি,কাঁদছো কেনো মা? কোকোলা লজেন্স পেলে বুঝি খুশি হবে না?” টেলিভিশনের পর্দায় এ্যাডটা দেখে মা, ছোটো মামা ছোট্ট মেয়েটিকে ডাকতেন “টুম্পা মণি”। সেই থেকেই তিনি সবার প্রিয় “টুম্পা”। তবে বর্তমানে টুম্পা মণি নামেই চেনে সবাই। জন্ম ১৯৯১ সালের ২৬ জুলাই। জন্মস্থান ঢাকাতেই,তবে বেড়ে ওঠা ফরিদপুর দাদার বাড়িতে ,প্লে থেকে শুরু করে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ফরিদপুর নিজ গ্রামের কিন্ডার গার্ডেন সহ প্রাইমারী স্কুল এবং হাইস্কুলে পড়তেন। বাবা সরকারী চাকুরী করার সুবাদে বদলি হয়ে সাতক্ষীরা চলে যাওয়াতে ক্লাস সেভেন এবং ক্লাস এইটে পড়াশোনা করতে হয়েছে “সাতক্ষীরা গার্লস হাইস্কুলে” । বাবার চাকরীর সুবাদে ক্লাস নাইন এবং ক্লাস টেন থেকে এস এস সি পর্যন্ত পড়তে হয়েছে “লালমাটিয়া গার্লস হাইস্কুলে”। বরাবরই পড়া ফাঁকি দেওয়ার বদঅভ্যাস ছিলো মেয়েটির, ফাঁকি দিলেও রেজাল্ট ভালো হতো তার। পড়াশোনা করেছেন মার্চ ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে। ইচ্ছে ছিল ব্যাংকার হবার। আস্তে আস্তে মতের পরিবর্তন ঘটে। কখনো চাকরী করবে এমন চিন্তায় নিজেকে আটকে রাখেননি। চেয়েছিলেন নিজে কিছু করতে। একদিন বাবা বললো ” আচ্ছা টুম্পা,তুমি তো খুব পড়া ফাঁকি দাও,টেস্টে এ্যালাও হলে কি চাও?” আমার উত্তর “মাইক্রোওয়েভ ওভেন” ।

মেয়েটির মাথায় সবসময় ঘুরপাক খেত কুকিং। তারপর থেকেই টিভিতে রান্নার শো দেখে রেসিপি নোট করে কিংবা পত্রিকার পাতার রেসিপি কালেক্ট করে অই টুকু সম্বল নিয়েই শুরু করলেন তার স্বপ্ন পূরনের প্রথম অধ্যায়। আর আজকের দিনে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। বলছি টুম্পা মনির কথা। টুম্পার শুরু হয় মাইক্রো ওভেনে কেক বানানো দিয়েই। পাশাপাশি সংসার সামলিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। অতঃপর বিয়ের দেড় বছর পরে কন্যা সন্তান এর মা হলেন। এরপর শুরু হলো নতুন জার্নি, সেই সাথে বড় হতে লাগলো স্বপ্নগুলোও।

তিনি বলেন, ফেসবুক ব্যাবহার করার সুবাদে বিভিন্ন কুকিং গ্রুপে এ্যাড হই, রান্না করেই ছবি ক্লিক করে পোস্ট করা ছিলো আমার নেশা। ধীরে ধীরে “টুম্পার হেঁশেল” নামে একটা ফেসবুক পেইজ ওপেন করে নিয়মিতো রেসিপি সহ রেসিপির ছবি আপলোড দিতাম। অনেক গুছিয়ে রেসিপি লিখতাম,অল্পদিনেই পরিচিত হয়ে গেলো পেইজটি। পেইজের রেসিপি পড়ে অনেকেই কমেন্টস করতো,”এতো গুছিয়ে রেসিপি দিচ্ছেন,আপনার উচিৎ একটি ইউটিউব চ্যানেল ওপেন করা”, মাথায় ঢুকলো আরেক চিন্তা,কি করে কি করবো? আমি তো চ্যানেল সম্পর্কে কিছুই পারি না,বুঝিও না। চাচাতো বোনের ছেলের সহযোগিতায় একটি ইউটিউব চ্যানেল ওপেন করলাম “কুকিং বুক বাই টুম্পা” নামে। প্রথমে ফোন দিয়ে ভিডিও করে আপলোড দিতাম,বোঝানোর প্রসেস খুব ভালো ছিলো বলে মাত্র ৪৫ দিনে মনিটাইজেশনও পেয়ে গেলাম। এর মাঝে ঢাকায় এসে এসে ছোটো ছোটো বেকিং কুকিং কোর্স করতাম,অনেক কস্ট করে জার্নি করে আসতাম ঢাকাতে,আবার গ্রামে যেতাম। আমার এসব আগ্রহ এবং কস্ট দেখে আমার আব্বু আমাকে ঢাকায় পার্মানেন্টভাবে নিয়ে আসেন,তখন আমার হাজবেন্ড গাজীপুরে জব করতেন। আব্বুই আমাকে একটি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করে দেন,হাজবেন্ডের সাপোর্ট এবং আব্বুর সাপোর্টে আমি বিভিন্ন কোর্স করা শুরু করি। আস্তে আস্তে কুকিং লেভেল কমপ্লিট করি,বেকারী এ্যান্ড পেস্ট্রীর উপরে ব্যাসিক থেকে শুরু করে এ্যাডভান্স ফ্রেন্স পেস্ট্রীর কোর্সও কসপ্লিট করি। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে বেকিং এর উপর ডিপ্লোমা কোর্স কমপ্লিট করি এবং বাংলাদেশ বিমান ক্যাটারিং এ ইন্টার্ণশিপ কমপ্লিট করি। এর মাঝে আমার ইউটিউব চ্যানেল থেকে ১ লাখ সাবস্ক্রিপশন অতিক্রম করাতে আমি “সিলভার প্লে বাটন” পাই, নিজে কাজ শিখে, হাতের কাজে পারফেকশন এনে নিজ বাসাতেই নারীদের বেকারী এ্যান্ড পেস্ট্রীর উপরে ট্রেইনিং দিতে থাকি। আমার বর্তমান কাজের বয়স প্রায় ০৯ বছর। আস্তে আস্তে স্টুডেন্টস সংখ্যা বাড়তে থাকে,নিজের মতো করে নিজে একটি ট্রেইনিং ইন্সটিটিউট পরিচালনা করতে থাকি,আমি মূলত অনলাইন এবং অফলাইন ২ ভাবেই কোর্স করিয়ে থাকি। এ পর্যন্ত আমার নিকট প্রায় ৮ হাজার স্টুডেন্টস ট্রেইনিং নিয়েছেন এবং তাদের ৮০% ই আজ সফল উদ্যোক্তা।

টুম্পা আরও বলেন, কেক,ডেজার্ট এর অর্ডার নেওয়ার পাশাপাশি বেকিং এর প্রোডাক্ট এর বিজনেস শুরু করি আমি এবং আমার হাজবেন্ড। অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে ডেলিভারী দেই,ইতিমধ্যে “ইয়াম্মী কেক হাউস” নামে আমরা ঢাকার মিরপুর ১ নাম্বারে একটি আউটলেট ওপেন করি,এবং সেখানে নিয়মিত আমার বানানো প্রোডাক্ট সাপ্লাই দিচ্ছি।

টুম্পার মুখে আরো জানা যায়, ছোটোবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিলো যদি জব না করি,নিজে কিছু একটা করবো,সেই ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রুপ দিতে আমাকে অনেক কস্ট করতে হয়েছে,রাত দিন এক করে কাজ করতে হয়েছে,ছোটো বাচ্চাকে ঘুম পারিয়ে কতশত কাজ করেছি,একটা কাজ পার্ফেক্ট না হলে আবার করেছি,এক একটা কোর্সের পেছনে আর্থিক যোগান দিতে শিখেছি এবং শিখিয়েছি। ইনকাম সোর্স বের করেছি,সেটা আবার নিজের কাজ শেখার পেছনে ব্যায় করে নতুন নতুন কাজ শিখেছি। এমনও দিন গিয়েছে আমার হাজবেন্ড আমার মেয়েকে সামলিয়েছে, আমি ক্লাস করেছি,ক্লাস করিয়েছি। আমাকে শপিং এর জন্য অর্থ দিলে সেটা দিয়ে আমি একটা একটা করে বেকিং প্রোডাক্ট কিনেছি,স্ট্রাগল করেছি অনেক, অনেক ত্যাগ স্বীকারও করেছি কাজ শিখতে। হ্যাঁ অনেকে অনেক রকম কথা বলতো,”কি হবে এসব শিখে,এটা আবার কোনো কাজ হলো”, এসব কথা আমার ফ্যামিলি কোনোদিন আমাকে কানে নিতে দেয় নি,তাদের পূর্ণ সাপোর্টেই আমি কাজ করেছি,করছি,ভবিষ্যতেও করবো। আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি নারীর উচিৎ নিজের পায়ে দাঁড়ানো,নিজের পরিচয়ে পরিচিতো হওয়া।”

সম্প্রতি টুম্পা মনি নতুন উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছেন, আসছে ফেব্রুয়ারির ২০ এবং ২১ তারিখে মিরপুরের সেতারা কণভেনশন হলে “উদ্যোক্তা মেলা” এবং ২ দিন ব্যাপি বেকিং ওয়ার্কশপ এর আয়োজন করেছেন,যেখানে নতুন উদ্যোক্তারা তাদের নানাবিধ কাজ তুলে ধরতে পারবেন সকলের সামনে, এমন টাই জানান তিনি।

নিজের জীবন যুদ্ধের কথা শেয়ার করতে গিয়ে টুম্পা মনি এক পর্যায়ে বলেন, আমার ইচ্ছা,আমি পিছিয়ে পরা নারীদের নিয়ে কাজ করবো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

Archive Calendar

All rights reserved © 2019
Design by Raytahost