স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান
খুলনা -১ সংসদীয় আসনটি দাকোপ এবং বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত।এই আসনটি জাতীয় সংসদের ৯৯ তম আসন।পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শেখ হারুনুর রশীদ মিয়া বিজয়ী হন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফ্রেবুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়।এ আসনে ভোটার ছিলেন ১লাখ ৪১ হাজার ৭শত ৩৪ জন।ভোট প্রদান করেন ৯৪ হাজার ৪ জন।নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শেখ হারুনুর রশীদ মিয়া বিজয়ী হন।নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৮শত ১২ ভোট।আর তার নিকটতম প্রতিদদ্বী ছিলেন সিপিবির অচিন্ত কুমার বিশ্বাস।কাস্তে প্রতীকে তিনি পান ২১ হাজার ৬ শত ৬৮ ভোট।৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনঃবিএনপির প্রফুল্ল কুমার কে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।১৯৯৬ সালের ১৫ ফ্রেবুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তত্ত্বাবধোহক সরকারের দাবিতে আওয়ামীলীগ সহ বিরোধীদল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি প্রতিহত ও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল,অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বীতা করেন।ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির প্রফুল্ল কুমারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন।তত্ত্বাবোধাহক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সপ্তম সংসদ নির্বাচনঃ আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে ভোটার ছিলো ১লাখ ৪৪ হাজার ৭ শত ১৯ জন।ভোট প্রদদান করেন ১লাখ১৫ হাজার ৪শত ২৬ জন।নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন।নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ২ শত ৪৭ ভোট।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিবি থেকে বিএনপি তে যোগদানকারি অচিন্ত কুমার বিশ্বাস ধানের শীষ প্রতীকে তিনিপান ১৮ হাজার ৩ শত ৯৮ ভোট।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন পান পঞ্চম সংসদের সংসদ সদস্য শেখ হারুনুর রশীদ মিয়া। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন দলের আরেক নেতা পঞ্চানন বিশ্বাস। মূলত সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই নেতার লড়াইয়ে অবশেষে পঞ্চানন বিশ্বাস জয়ী হন।
অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫ শত ৯৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫১ হাজার ২ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৫ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আমীর এজাজ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৫ শত ২৩ ভোট।
নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ননীগোপাল
মন্ডল বিজয়ী হন।২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৯ শত ৩৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩ শত জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মন্ডল বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২০ হাজার ৯ শত ৬৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আমীর এজাজ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৮ হাজার ৪ শত ৮৭ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৪ শত ১৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯ হাজার ৫৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৯ শত ৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ননী গোপাল মন্ডল। চাকা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৫ শত ২৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪ শত ২০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৫ শত ৫৭ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আমীর এজাজ খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির অশোক কুমার সরকার ও হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু সাঈদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭২ হাজার ১ শত ৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আমীর এজাজ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৩ শত ২২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায় খুলনা -১ আসনে পঞ্চম,সপ্তম, অষ্টম,নবম,দশম ও একাদশ সংসদে টানা আওয়ামীলীগ বিজয়ী হয়।বিএনপি বিজয়ী হয় শুধু মাত্র ১১ দিনের ষষ্ঠ সংসদে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.৩২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.৩৭%, বিএনপি ১৫.১১%, জাতীয় পার্টি ৭.৬২% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৯.৯০% ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.৭৬%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৩.৯৩%, বিএনপি ১০.৩২%, জাতীয় পাটি ৬.৯৭ % , জামায়াতে ইসলামী ২.০০ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৬.৭৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.২২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫১.৯৩%, ৪দলীয় জোট ৩১.৪২%, জাতীয় পাটি ৪.৩৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১২.৩১% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.০১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬১.৬৪ %, ৪ দলীয় জোট ৩৪.৯১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৩.৪৫% ভোট পায়।
খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) আসনে বেশির ভাগ সময় হিন্দু সম্প্রদায় থেকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একবারও দলকে নিরাশ করেননি তাঁরা। এবারও ব্যতিক্রম হবে বলে মনে করেন।
Leave a Reply