স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান।
ড. প্রশান্ত কুমার রায়। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)। তিনি তার পদ ব্যবহার করে ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিশেষ করে পিডি থাকা অবস্থায় তার অনিয়মের প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক বলছে, প্রশান্ত কুমার রায় তার সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। পাশাপাশি সম্পদের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। সোমবার (৫ জুন) সকালে দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। ‘যারা দুর্নীতি করে তারাই আবার মিটিংয়ে বড় বড় কথা বলে’দুদকের তথ্য অনুযায়ী প্রশান্ত কুমার রায়ের সম্পদের মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে ১০৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে পুলপাড় রোডে ১২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, গ্রিন রোডের গ্রিন সুপার মার্কেটে ৩০০ বর্গফুটের রুম, খুলনার বটিয়াঘাটা থানায় ২ দশমিক ৪ একর জমি।
এছাড়া পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমির ওপর দুতলা ভবন। একটি জাপানি প্রিমিও গাড়ি, একটি এস্কেভেটর (ভেকু), সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ১৭ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী।
দুদক জানায়, ডেনিম পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে ও ডেনিম এক্সপোর্ট প্রসেসিং লিমিটেডে প্রশান্ত কুমার রায়ের বিপুল পরিমাণ অর্থ বেনামে বিনিয়োগ রয়েছে। এছাড়া ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের কেনাকাটায় প্রশান্ত কুমার রায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়।
দুদক বলছে, প্রশান্ত কুমার রায় প্রকল্প পরিচালকের পদ ব্যবহার করে পিপিআর-২০০৮ এর উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি ব্যবহার না করে অটবি থেকে ৪ দশমিক ৬৫ কোটি টাকার আসবাবপত্র কিনে কমিশন গ্রহণ করেছেন। এছাড়া তিনি প্রকল্পে নিম্নমানের ল্যাপটপ ক্রয় করেছেন যা ব্যবহার করা যায়নি।
প্রত্যেক উপজেলায় ইন্টারনেট বেইজড স্টেশন স্থাপনের কাজ তার বন্ধুর প্রতিষ্ঠান ‘অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ক’র মাধ্যমে করিয়ে বিপুল অর্থ কমিশন হিসেবে গ্রহণ করেছেন প্রশান্ত কুমার রায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, দুদক দীর্ঘ অনুসন্ধান করে জানতে পারে যে, অসাধু উপায়ে এক কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ২৪৭ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন প্রশান্ত কুমার রায়। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্পদ অর্জনের বিপরীতে আয়কর নথি অনুযায়ী ড. প্রশান্ত কুমার রায়ের বেতন-ভাতা, ব্যাংক সুদ, কৃষি আয়, কর অব্যাহতি ও করমুক্ত আয়সহ মোট চার কোটি ৭৫ লাখ ৩ হাজার ২৮৭ টাকার বৈধ আয় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ব্যয় দুই কোটি এক লাখ ২৬ হাজার ১৭৮ টাকা বাদ দিয়ে এক কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ২৪৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
মামলা এজাহারে আরও বলা হয়, ড. প্রশান্ত কুমার রায় ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে সোনালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংকের ১২টি শাখায় বিভিন্ন তারিখে ১৩ কোটি ২৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা জমা এবং ১২ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার ১৮৩ টাকা উত্তোলন করেন। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে এসব লেনদেন অস্বাভাবিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ।
দুদক বলছে, প্রশান্ত কুমার রায় ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৩৫ লাখ টাকা বৈধভাবে প্রেরণের পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল অর্থ অস্ট্রেলিয়াতে প্রেরণ করেছেন।
এছাড়া প্রশান্ত কুমার রায়ের বোনের ছেলে মনোজ কুমার ৩৫ বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ওই ব্যক্তির নামে ভূমির আমমোক্তার নিযুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে এক কোটি ৫৫ টাকা মূল্যের জমি বিক্রি করেন প্রশান্ত কুমার রায়। একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তির নিকট থেকে আমমোক্তারনামা গ্রহণ ও ভূমি কেনাবেচার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে প্রশান্ত কুমার রায় অপরাধ করেছেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়।
Leave a Reply