রাজশাহী প্রতিনিধি।
দিন দিন অপ্রতিরোধ্য ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার নুরনগর গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে আশিক রানা (২৮)। আড়ানী রেল স্টেশন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে আশিক। প্রায় তার নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের। অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হলেও ভয়ে অনেকে প্রতিবাদ করতে সাহস করেনা । তবে মাঝে মধ্যে দুই একটি ঘটনায় মামলা হলেও প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় বিচার পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। এরফলে বেড়েই চলেছে আশিক সহ তার সহযোগীদের অপরাধ কর্মকান্ড বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, আশিক ও তার সহযোগীদের আড়ানী রেল স্টেশন , ঝিনা, হরিপুর ও খাগড়বাড়িয়া সহ আশেপাশের এলাকায় রয়েছে অবাধ বিচরণ। এলাকায় এরা এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ বা নির্যাতিত হয়ে মুখ খুললে বা আইনী সাহায্য নিলে ওই ভুক্তভোগিকে আরও বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এছাড়াও মামলার বাদীসহ সাক্ষীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করে । এমনকি তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক কেও হুমকি ও মিথ্যা মামলায় আসামি করার প্রক্রিয়া চালায় তারা। এ কারণেই আশিকদের এসকল অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলতে ভয় পায় এলাকাবাসী।
আশিকের অপরাধ জগতের সহযোগীরা হলো -নুরনগর গ্রামের নাজিম উদ্দীন এর ছেলে মানিক (২৫),হোসেন কুলির ছেলে হিমেল(৩২), সাবানের ছেলে জুয়েল (২৬), জহুরুল এর ছেলে মুছা (২২), বাচ্চুর ছেলে বাধন (২৩), মহশিনের ছেলে আশা ২১ ( কিছু দিন আগে ইয়াবা ট্যাবলেট সহ আটক), মুনছুরের ছেলে জাহিদ, খায়রুল এর ছেলে শাওন (২০), চকরপাড়া গ্রামের সাগরের ছেলে সাজিত (২৪), মুক্তারের ছেলে হাফিজ (৩৫), ঝিনার আরজানের ছেলে সাইফুল, বেড়ের বাড়ির মৃত মুক্তারের ছেলে নয়ন (২৫) সহ আরো ১০/১৫ জন। এদের নামে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানাযায়।
সূত্রে জানা যায়, এরা সবাই মাদকাসক্ত।মাদকের টাকা জোগাড় করতে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে থাকে প্রতিনিয়ত। মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ ছেলে-মেয়ে এমনকি ভাই-বোনও একসাথে রাস্তা দিয়ে চলতে পারে না। এদের দৃষ্টিগোচর হলে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে মারধর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাথে থাকা অর্থকড়ি, মোবাইল ফোন সহ মূল্যবান সামগ্রী। নির্জনে নিয়ে খারাপ অপবাদ দিয়ে টাকা দাবী করা, নিরীহ মানুষের পকেটে মাদক দিয়ে নির্যাতন করা এবং পরবর্তীতে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া । এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা, সেই চাঁদা না পেলে মারপিট – বাড়ি ভাঙচুর করা, টাকার বিনিময়ে মানুষ কে জিম্মি করে ইচ্ছার বাইরে কাজ করিয়ে নেওয়া সহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, তাদের অপকর্ম চলমান থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন উদাসীন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ে মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানদের নিয়ে আশিক গড়ে তুলছে আড়ানী রেল স্টেশন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব। এবং প্রভাবশালী নেতার প্রশ্রয়েয় ধীরে ধীরে বেপরোয়া হয়ে উঠছে আশিকরা। আর এ ভাবেই মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী দিয়ে ফাঁসানো সহ অন্যান্য মারাত্মক সব অপকর্ম করে থাকে এরা। এরা এতোটাই নিষ্ঠুর একই দিনে এলাকার প্রায় দশ জনকে নির্মমভাবে মারপিট করে গুরুতর আহত করেছে। এমন নির্মমতার ঘটনা অসংখ্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আশিকের বিরুদ্ধে ৯ থেকে ১১ টি মামলা চলমান রয়েছে । এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বাঘা থানায়। মামলার নথি থেকে পাওয়া গেছে ২০২০ সালে সুমন নামের এক ব্যক্তি কে সুদ ব্যবসায়ীর পক্ষনিয়ে আশিক তার নিজ বাড়িতে আটকে রাখে এবং সুমনের স্ত্রীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকের চেক বই নিয়ে আসতে বলে ও পরবর্তীতে সুমন কে দিয়ে জোরপূর্বক ফাঁকা চেক ও ১৫০ টাকার দুই সেট স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। যার মামলা নং ২৬৭/২০২০ (বাঘা)। ২০২১ সালে বিস্ফোরক মামলার আসামি হয় আশিক যার বাঘা থানার মামলা নং ৯ তারিখ ১৪/১/২০২১। ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমান ও তার ভাগনা আরিফুল ইসলাম কে সন্ত্রাসী কায়দায় হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে আক্রমণ করে এবং মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়। যার বাঘা থানা মামলা নং ৯ তারিখ ৬/২/২০২১। ২০২১ সালেই খাগরবাড়ি তে এক অটোরিকশার দোকানদার কে মারপিট, দোকান ভাংচুর, অটোরিকশা ছিনতাই যার মামলা নং ৯ বাঘা থানা তারিখ ১৯/৪/২০২১। এরপর আবারও ২০২১ সালে হত্যা মামলা, সাম্প্রতি আড়ানী রেল স্টেশন বাজারে আমিরুল টেলিকম এর মানিক আমিরুল কে মারপিট করে গুরুতর ভাবে আহত করে। এতে তার এক হাত ভেঙে যায়। এঘটনায় আহত আমিরুল বাদী হয়ে মামলা করে যার বাঘা থানা মামলা নং ১০ তারিখ ৯/৮/২০২৩। আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানের বাড়িতে ভাংচুর, চুরি, শ্লীলতাহানি, ভয়ভীতি ও হুমকির ঘটনায় মামলা যার বাঘা থানা মামলা নং ১৭ তারিখ ১৭/৮/২০২৩। ডেকোরেটর ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম এর বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করে এবং না দেওয়ায় মারপিট করে কাছে থাকা নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেই। এবিষয়ে আদালতে করা মামলাটি তদন্তে ভার পিবিআই এর ওপর রয়েছে। সবজি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম কে ঝিনা বাজারে গিয়ে চাঁদা না দেওয়ায় মারপিট করে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করেছে ভুক্তভোগী। এসকল ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিক তন্ময় দেবনাথ কে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং থানায় অভিযোগ করায় বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে আশিক ও তার সহযোগীরা।
এদিকে ভুক্তভোগীরা এর সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি নিরাপত্তা চেয়ে চারঘাট- বাঘার অভিভাবক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মোঃ শাহরিয়ার আলম এমপি , রাজশাহী জেলা পুলিশের মাননীয় পুলিশ সুপার , বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ এর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এবিষয়ে জানতে আশিক রানার মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।সেই কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে সচেতন মহল মনে করেন, এদের এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভবিষ্যতে তাদের মাধ্যমে আরো বড় ধরনের অপরাধমূলক
Leave a Reply