কহিনুর বাউফল(পটুয়াখালী)প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় এক আশ্চর্য যাদুরকাঠির বলে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন সুধির নট্র(৪২) নামের এক যুবক। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে স্বাক্ষাতের পর এই যাদুরকাঠি পেয়ে যান তিনি। আর এই যাদুরকাঠি কাজে লাগিয়ে তিনি রাতারাতি শূন্য থেকে কোটিপতি হয়ে যান। অনেক এমপি মন্ত্রীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তার কাছে ধর্ণা ধরতেন। অথচ এই সুধির নট্র একসময় জীবন জীবিকার তাগিদে বাদাম বিক্রি করতেন। তার বাবা সুখ রঞ্জন নট্র একসময় পান বিক্রি করতেন । অর তার মা দ্বিপালী নট্র অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। সুধির নট্র বাতাম বিক্রির পাশাপাশি সিনামা হলে মাইকিং করতেন। তার গলার ডায়লগ ভাল হওয়ায় একদিন নজরে পরেন স্থানীয় সাবেক এমপি আসম ফিরোজের। এরপর সুধির আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচির মাইকিং করতেন। এ ভাবে সখ্যতা হয়ে যায় সাবেক এমপি ফিরোজের সাথে। তার ঢাকার বাসভবনে যাতায়ত করতেন সুধির। যখন এমপির বাসায় যেতেন সাথে বড় বড় মাছ, মুরগিসহ খাবার নিয়ে যেতেন। একদিন সাবেক এমপি ফিরোজের মাধ্যমে সুধিরের পরিচয় হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস সাইফুজ্জামান শিখরের সাথে। একপর্যায়ে শিখরের সাথে তার দারুন সখ্যতা হয়ে যায়। এই সখ্যতা কাজে লাগিয়ে সুধির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন। অভিনয়ে পাকা ছিলেন সুধির। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে প্রথম দেখায়ই মা বলে সম্বোধন করলেন। এরপর স্ত্রী সন্তান নিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর গণ ভবনে দেখা করেন তিনি। এ ভাবে ১৫-২০ বার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছেন তিনি। যখনই দেখা করতে যেতেন তখন তার এই মায়ের জন্য মাছ, মুরগিসহ নানা ধরণের খাবার নিয়ে যেতেন। এই সুবাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জাদুরকাঠি হয়ে যান। এপর থেকে এই যাদুরকাঠি কাজে লাগিয়ে রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যান সুধির। সুধির নট্র ফেসবুক প্রোফাইলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার ও স্ত্রী সন্তানের তোলা ছবি দিয়েও নানা মহলে প্রভাব বিস্তার করতেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সুধিরের তোলা এ ছবির সদ্বব্যবহার করেছেন সুধিরের আত্বিয় স্বজনরাও। সুধির ঠিকাদারী কাজ ভাগিয়ে নেয়া, থানায় দালালি ও চাকরির তবদির বানিজ্য করে টাকা কামাই করতেন । জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও এবং ওসি তাকে সমিহ করতেন। গ্রামের খড়ের ঘরে ভেঙ্গে নির্মাণ করেন আদাপাকা ঘর। এরপর পৌর শহরের শহরের জায়গা রেখে সেখানে দুইতলা ভবন নির্মাণ করে । শুধু জায়গা আর ভবনের মূল্য হবে কোটি টাকার উপরে। তবে চালক সুধির নিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা রাখতেননা। টাকা রাখতেন নিকট আত্বিয় স্বজনের ব্যাংক হিসাবে। কথিত আছে পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক এক মেয়রকে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার শর্তে বাউফলের চন্দ্রদ্বিপ ইউনিয়নে প্রায় তিন কোটি টাকার একটি ব্রিজের কাজ ভাগিয়ে নেয় সুধির। এ ভাবে অনেক উন্নয়ন কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। এলাকার ধন্যঢ্য ব্যক্তিদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রভাব দেখিয়ে শহরের দাশপাড়া একটি সার্বজননীন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। শূন্য থেকে কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয়ে সুধির নট্র দোয়সারা ভাবে কিছু প্রশ্নে উত্তর দিয়েছেন। ওইসব প্রশ্নে উত্তরে সুধির বলেন গ্রামের বাড়িটি তিনি করেননি, তার বাবা করেছে। শহরের জায়গা ও দুইতলা ভবন তার ও তার ছোট ভাই সুশিলের নামে। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ও ধণাঢ্য ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত সত্য রঞ্জন সাহার কাছ থেকে তিনি জমি কিনেছেন। জমির দাম আস্তে আস্তে দিয়েছেন। দুইতলা বাড়িটি কিভাবে করলে সরাসরি কোন উত্তর দেননি। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলেন আমরা দুই ভাই মিলে করেছি। তার ভাইয়ের প্রভাতী নামের একটি জুয়েলারী ব্যবসা নিয়ে বলেন সত্য সহার ছেলে স্বাধীন র সাহার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। বাদাম বিক্রির বিষয়ে বলেন তিনি কাজ করেছেন কোন দিন বাদাম বিক্রি করেননি। তবে সিনামা হলে মাইক প্রচারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কাজ ভাগিয়ে নেয়া, থানার দালালি ও চাকরির তদবির বানিজ্য কোন কালে করেননি। এলাকার ছেলে হিসাবে প্রশাসনের লোকজন তাকে ভালোবাসত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা স্বাক্ষাতের বিষয়ে সতোত্তর দেননি। তার বাবা ও মায়ের প্রসঙ্গে বলেন, তারা কাজ করতো। কিন্তু কখনো পান ও শাপলা বিক্রি বা কারো বাসায় কাজ করেননি। আত্বিয় স্বজনের ব্যাংক হিসাবে টাকা রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, আত্বিয় স্বজনের ব্যাংক হিসাবে আমার কোন টাকা নেই। আমার পূবালী ও জনতা ব্যাংকে দুইটি এ্যাকাউন্ট আছে, সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখেন কত টাকা আছে? তিনি কোন ঠিকাদারী কাজ করেননি কিংবা কাউকে শেখ হাসিনার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার নামে কাজ ভাগিয়ে নেননি।
সুধিরের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষকে নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতিরা তার হাত থেকে বাঁচতে বিগত ২৭ মে ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক প্রধামন্ত্রীর শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছিলেন। কতিথ আছে এ সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গণ ভবনে যাতায়ত বন্ধ হয়ে যায় সুধিরে। বর্তমানে সুধির একটি জুতার ব্যবসা করছেন। সুধির নট্রর স্ত্রী ও দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রী শহরের একটি প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক । অভিযোগ রয়েছে, তার স্ত্রীর চাকরীও নিয়েছেন প্রভাব দেখিয়ে। প্রথমে তার স্ত্রীর দাশপাড়া গ্রামের একটি প্রাইমারী স্কুলে চাকরী করলেও বিধি লঙ্ঘন করে পৌর শহরের বদলি করে নিয়ে আসেন। তার বড় ছেলে পড়া শুনা করেন দুমকি ক্যন্টমেন্ট স্কুলে। সুধির নট্রর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাশপাড়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি বাউফল পৌর শহরের৭ নম্বর ওয়ার্ডের দাশপাড়া সাহাপাড়া বসবাস করেন। সুধিরের যাদুকাঠি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনের মুখে দেশ ত্যাগ করলেও তার কথিত ছেলে সুধির নট্র বহাল তবিয়তে আছেন। সুধির নট্রর অতিথ জীবনের গল্প এলাকার সবাই জানে। তেমনি তার রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার গল্পটিও সবাই জানে।
Leave a Reply